জীববিজ্ঞানে আমরা জীবনের বিভিন্ন দিক, তাদের চরিত্র, বিবর্তন এবং পরিবেশের সাথে টাল মিলিয়ে চলা সবকিছুই জড়িত। এই শাখায় আমরা মানুষের প্রাত্যহিক জীবন থেকে শুরু করে জীবনের অস্তিত্বসহ প্রতিটি কণা কিভাবে কাজ করে, সবকিছু সম্পর্কে বুঝার চেষ্টা করি। একটি দেহের দৈনন্দিন সম্পন্ন বিভিন্ন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে প্রতিটি প্রক্রিয়ার নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক, সবকিছু নিয়ে আমরা গবেষণা করি। বর্তমানে এই গবেষণার কাজে অনেক বেশি পরিমাণ ডেটা সংগ্রহ করা লাগে। একই সাথে এসব ডেটা সঠিকভাবে ব্যবহার করে এর থেকে সত্য বের করে আনার জন্য এবং সেই ঘটনা ব্যাখ্যা করার জন্য প্রোগ্রামিং একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
খুব বেশিদিন আগেও যেতে হবে না, যখন গবেষকরা সকল গবেষণা এবং পরীক্ষা হাতেকলমে পরিচালনা করতেন এবং সেসব পরীক্ষালব্ধ ফলাফল কাগজে লিখে রাখতেন। কিন্তু বর্তমানে গবেষণার ক্ষেত্রে বেশকিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। তারমধ্যে কিছু বিষয় হলো, গবেষণার কাজ এখন অনেক ক্ষেত্রে মৌলিক হাতে কলমের কাজের সাথে সাথে অনেক বেশি পরিমাণ ডেটা সংগ্রহ, সেগুলো নিয়ে বিশ্লেষণ করা এবং বিভিন্ন মডেল তৈরি করে ফলাফল বিশ্লেষণ করা হয়। এইসকল কাজ এখন আর সাধারণ পদ্ধতিতে করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য এবং এই কারণেই প্রোগ্রামিং এখন জীববিজ্ঞানের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, জিনোম সিকোয়েন্সিং-এর মতো একটি জটিল এবং বিশাল ডেটা বিশ্লেষণ করতে সাধারণ ডেটা প্রসেসিং সরঞ্জাম যথেষ্ট নয়। এখানে প্রোগ্রামিং ভাষা যেমন R, Python, MATLAB ইত্যাদির গুরুত্ব দেখা যায়। প্রোগ্রামিং ভাষাগুলো জীববিজ্ঞানীদেরকে জটিল ডেটা অ্যালগরিদম তৈরি করতে এবং বিশ্লেষণ করতে সহায়তা করে। এই বড় ডেটা নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা অনেক নতুন আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন, যা হয়তো অল্প কিছু ডেটা দিয়ে বের করা কখনও সম্ভব হত না।
কম্পিউটেশনাল বায়োলজি, জীববিজ্ঞান এবং তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরি একটি শাখা যা প্রোগ্রামিং ছাড়া অচল। এই শাখায় ডিএনএ, আরএনএ, প্রোটিন, এবং সেলুলার ডেটা বিশ্লেষণ করা হয়। এই চারটি বিষয় উল্লেখ করলেও এর বিস্তৃতিতে বুঝতে পারা মুশকিল, কিন্তু আমাদের শুরুর জন্য এই আলোচনা প্রাসঙ্গিক। জেনেটিক্স গবেষণায় জিন এবং প্রোটিনের ইন্টারঅ্যাকশন বা পারস্পরিক তথ্য আদান প্রদান বোঝার জন্য জটিল অ্যালগরিদম তৈরি করা এবং ডেটা বিশ্লেষণ প্রয়োজন, যা প্রোগ্রামিং ব্যবহার না করলে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। এছাড়া কোন অসুখে কোন ওষুধ কাজ করবে এবং কোন জনসংখ্যায় একটি ওষুধ সবচেয়ে ভালো কাজ করবে, এসব পূর্বাভাস দিতে প্রোগ্রামিং মডেল তৈরি করা হয়। প্রোগ্রামিং এর সহায়তায় গবেষকরা এই বিশাল পরিমাণ ডেটা সমন্বয় করতে পারেন, সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে পারেন এবং ফলাফলকে তথ্য হিসেবে ছবির মাধ্যমে আকারে উপস্থাপন করতে পারেন।
বর্তমানে জীববিজ্ঞানীদের জন্য জীবের বিভিন্ন বিষয়ের জ্ঞান এর সাথে প্রোগ্রামিং শেখাও অনেক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। গবেষণার বিভিন্ন ফলাফল দ্রুত পাওয়া, বড় ডেটা নিয়ে কাজ করা, সঠিক বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা তৈরি হওয়া এবং সঠিক পরিসংখ্যান ব্যাবহার করতে জানার জন্য এখন প্রোগ্রামিং দক্ষতা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এগুলো ছাড়া জীববিজ্ঞানের সাথে মেশিন লার্নিং, ডিপ লার্নিং এবং ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল সম্পর্কিত গবেষণাও প্রোগ্রামিং দক্ষতার মাধ্যমে সহজ করা সম্ভব।
এইভাবে, জীববিজ্ঞান এবং প্রোগ্রামিং-এর মধ্যকার সম্পর্ক এখন অপরিহার্য এবং গভীর। জীববিজ্ঞানীরা প্রোগ্রামিং শেখার মাধ্যমে তাদের গবেষণার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছেন, এবং এটি তাদের গবেষণাকে আরও দ্রুত, শক্তিশালী এবং কার্যকর করছে।
আপনি যদি এই ব্লগের নিয়মিত আপডেট পেতে চান, তাহলে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন। আমি নতুন কোনো কন্টেন্ট যোগ করার সাথে সাথেই আপনাকে ইমেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেব।